বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিবছরই অনেক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী আসেন। বিশেষ করে মেডিকেল শিক্ষার প্রতি তাঁদের আগ্রহ বেশি। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে পড়ছেন এমনই এক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী, যিনি অনুরোধে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। সামনে তাঁর চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা। এখন পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও মন পড়ে আছে গাজায়।
তিনি জানান, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় তাঁদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, পরিবারের কোনো সদস্যের বাড়ি আর অবশিষ্ট নেই। গত ছয় মাস ধরে তাঁরা একটি শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। প্রতিদিন পরিবারের খবর পাওয়ার সুযোগ না থাকলেও গত সপ্তাহে জানা গেছে, যে ক্যাম্পে তাঁরা ছিলেন সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী কামান দিয়ে হামলা চালিয়েছে। তাঁর পরিবারের সদস্যরা ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে গেলেও চারজন আহত হন, যাঁরা বর্তমানে অনেকটাই সুস্থ। বর্তমানে তাঁরা আরেকটি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি বলেন, গাজার প্রায় প্রতিটি পরিবারেরই এখন একই গল্প। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু—সবাই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকে হারিয়েছেন প্রিয়জন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা বেঁচে আছেন, এটাকেই তিনি এখন আশার জায়গা হিসেবে দেখছেন।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে প্রায় ২০ জন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। সবার চোখেই এখন দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগ। গাজায় বহু বছর ধরে সহিংসতা চললেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি যেন সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, ফেসবুক খুললেই নিজের ভাইবোনদের দুর্দশার খবর চোখে পড়ে, মৃত্যু আর ধ্বংস যেন প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায়। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও দূরে থাকার চেষ্টা করছেন।
তবে এর মধ্যেও যে আশার আলো দেখছেন, তা হলো বাংলাদেশের মানুষের সহমর্মিতা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বন্ধু, সহপাঠী ও শিক্ষকরা নিয়মিত তাঁদের খবর রাখছেন। ক্লাসে গেলে বন্ধুরা জানতে চান পরিবারের খোঁজখবর। শিক্ষকরা দেশের-বিদেশের সব শিক্ষার্থীকে সব সময়ই সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখেন, তবে এখন তাঁদের আন্তরিকতা যেন আরও বেশি করে প্রকাশ পাচ্ছে। তাঁরা চান, এই দুঃসময়েও ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা মনোযোগ ধরে রাখতে পারে পড়াশোনায়।
এই শিক্ষার্থী বাংলাদেশের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আমি জানি, বাংলাদেশের মানুষ সবসময়ই ফিলিস্তিনের পাশে। ৬ এপ্রিল ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমার কলেজের শিক্ষার্থীরাও ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নিয়েছে ইসরায়েলি নিপীড়নের বিরুদ্ধে।”
সবশেষে তিনি আশাবাদী কণ্ঠে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, একদিন ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে। সেই দিন বাংলাদেশি বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে আমরা মুক্ত, স্বাধীন ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়াব।”