মডেল মেঘনা আলম গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টার মন্তব্য: কী বললেন আসিফ নজরুল?
ঢাকা, ১৩ এপ্রিল: সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, তার বিরুদ্ধে কিছু “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ” রয়েছে এবং বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সক্রিয়ভাবে দেখছে। আজ রোববার সমসাময়িক জাতীয় ইস্যু নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি এটাও স্বীকার করেন যে, গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া নিয়েও কিছু প্রশ্ন থেকে গেছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, “মেঘনা আলমকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা যথাযথ ছিল না। যদিও তার বিরুদ্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, তারপরও প্রক্রিয়াগত দিকগুলো আরও স্বচ্ছ হতে পারত।” তিনি জানান, মেঘনার বিষয়টি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যবেক্ষণ করছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
এর আগে গত ৭ এপ্রিল মডেল মেঘনা আলমকে তার ঢাকার বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটক করে। এরপর ১০ এপ্রিল তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেন। এই ঘটনা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অবশ্য মেঘনার আটকের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে জানায়, তাকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আটক করা হয়েছে এবং “অপহরণ” শব্দটি প্রযোজ্য নয়। ডিএমপি আরও বলে, “তাকে আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়নি, বরং সুরক্ষা হেফাজতে রাখা হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে আসিফ নজরুল বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মোট ৮৮ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে। এই ঘটনা তদন্তে একটি রিভিউ কমিটি গঠিত হয়েছে যেখানে আমি নিজেও আছি।” তিনি জানান, “এর মধ্যে ৬৬ মিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে এবং বাকি অংশ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।”
তিনি বলেন, এই চুরির পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কাজ করেছে। “মূলত ২ বিলিয়ন ডলার চুরির পরিকল্পনা ছিল। বাংলাদেশকে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত করাই ছিল উদ্দেশ্য,” বলেন আসিফ নজরুল।
আইন উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে। “আমরা শুধু টাকাই উদ্ধারের চেষ্টা করছি না, বরং একটি সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্যও কাজ করছি,” বলেন তিনি।
এই প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। “বিশ্বের নানা সংস্থার সঙ্গে আমরা যোগাযোগে আছি। জালিয়াতি এবং সাইবার অপরাধের তদন্তে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হচ্ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে আসিফ নজরুল আরও জানান, আলোচিত মাগুরার আছিয়া হত্যাকাণ্ডের মামলার চার্জশিট ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে এবং আজই আদালতে তা দাখিল করা হবে। তিনি বলেন, “এই মামলার বিচার খুব দ্রুত সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, “আছিয়া হত্যার বিচার শুধু একটি মামলার বিচার নয়, এটি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”
আসিফ নজরুল বলেন, “নাগরিকদের আস্থা অর্জন করাই সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই বিচারপ্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মেঘনা আলমের মতো ঘটনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি কিংবা আছিয়া হত্যার মতো অপরাধের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের উত্তর দেন আইন উপদেষ্টা। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “মেঘনার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ তা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। তবে যা-ই হোক, আইনের চোখে সবাই সমান।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির বিষয়ে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় তিনি জানান, “একটি সুপরিকল্পিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ছিল এটি। আমরা এই চুরির পেছনের কারণ ও চক্র উন্মোচনে অগ্রসর হয়েছি।”
মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারের পর দেশের একাধিক মানবাধিকার সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, “যে কেউ অপরাধ করতে পারে, কিন্তু তাকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া আইনসংগত এবং মানবিক হতে হবে।”
আইন উপদেষ্টা এ বিষয়ে বলেন, “আমরাও চাই প্রতিটি গ্রেপ্তার, তদন্ত ও বিচার হবে সংবিধানসম্মত এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচিত।”
মডেল মেঘনা আলম গ্রেপ্তারের পর শোবিজ অঙ্গনের অনেকে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারা মনে করছেন, এই ঘটনা আরও স্বচ্ছভাবে প্রকাশ হওয়া উচিত। কেউ কেউ দাবি করেছেন, মেঘনা নির্দোষ হতে পারে এবং তার মুক্তি দাবি করেছেন।
এই প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, “আইনের প্রক্রিয়া চলমান। কাউকে আগে থেকেই দোষী বা নির্দোষ বলা ঠিক হবে না। তদন্ত ও বিচার সঠিক পথে চললে সত্য উদঘাটিত হবেই।”
মডেল মেঘনা আলমের গ্রেপ্তার, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি এবং মাগুরার আছিয়ার মামলা—তিনটি ঘটনাই এখন জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, সরকার এসব ইস্যুকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে এবং আইনানুগ পথে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর।
তবে, মেঘনা আলমের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া নিয়ে জনগণের মনে যে প্রশ্নগুলো জেগেছে, সেগুলোর সমাধানও সরকারকেই দিতে হবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির মতো জাতীয় নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট অপরাধে দ্রুত অগ্রগতি এবং দৃশ্যমান বিচার প্রক্রিয়া দেখার অপেক্ষায় রয়েছে পুরো জাতি।