থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনকে পদচ্যুত করার পর দুই দিন পর, শুক্রবার, পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছে দেশটির পার্লামেন্ট। এই নির্বাচন দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পদচ্যুতির কারণ
ফিউ থাই পার্টির নেতা স্রেথা থাভিসিনকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের জন্য ৪০ জন সিনেটর একটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন। সাংবিধানিক আদালত ৬–৩ ভোটে পিটিশনটি গ্রহণ করে স্রেথার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও আদালত অবমাননার অভিযোগে পদচ্যুতির রায় দেয়। স্রেথা অভিযোগের মুখে পড়েন যে, তিনি ২০০৮ সালে আদালতের কর্মীদের ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করা সাবেক আইনজীবী পিচিট চুয়েনবানকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।
নতুন প্রধানমন্ত্রী
নতুন প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা (৩৭), সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার ছোট মেয়ে, সহজেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পেতংতার্নের দল এবং জোটের ৩১৪ আসনের মধ্যে ৩১৯টি ভোট পেয়েছেন, আর বিপক্ষে ১৪৫টি ভোট পড়ে। পার্লামেন্টে ৪৯৩ আসনের মধ্যে পেতংতার্নের দল বেশিরভাগ আসন পেয়েছে, যা তাঁর নির্বাচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
রাজনৈতিক পটভূমি
পেতংতার্নের নির্বাচনের আগে, থাইল্যান্ডের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বিভক্তি এবং সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণে অস্থির ছিল। ২০১৪ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর, সেনাপ্রধান জেনারেল প্রায়থ চান–ও–চা রাজনৈতিক বিভক্তি সমাধানের জন্য নতুন সংবিধান প্রণয়ন করেন এবং তিন বছর পর ২০১৭ সালে এটি কার্যকর হয়।
ফিউ থাই পার্টি ২০২৩ সালে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাদের সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করে, যা থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। এছাড়া, ২০২৩ সালের নির্বাচনে এমএফপি জোট ছড়িয়ে পড়ে এবং স্রেথার অধীন ফিউ থাই পার্টি গঠন করে।
পেতংতার্নের নীতি ও চ্যালেঞ্জ
পেতংতার্নের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে ব্যাংককে গণপরিবহনের খরচ কমানো, স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি এবং দৈনিক মজুরি দ্বিগুণ করার অঙ্গীকার রয়েছে। তবে, তাঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জগুলো থাকবে যেমন দেশের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি, বিরোধীদের সম্ভাব্য উত্থান এবং তাঁর দলের প্রতি জনসমর্থনের অভাব।
পেতংতার্ন প্রথম দায়িত্বপালনকালে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মোকাবিলা করবেন। তাঁর নেতৃত্বে থাইল্যান্ডের রাজনীতি নতুন দিগন্তে প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
থাইল্যান্ডের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়
পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা দেশের সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন এবং তিনি দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রীও বটে। তাঁর ফুফু ইংলাক সিনাওয়াত্রা থাইল্যান্ডের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পেতংতার্নের নির্বাচিত হওয়া থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং তাঁর নেতৃত্বে দেশের ভবিষ্যৎ কীভাবে গড়বে, তা দেখতে হবে।