ভারতে আয়োজিত তৃতীয় ‘ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গ্লোবাল সাউথের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ ও শিক্ষার্থী। তাদের অবশ্যই কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে। শনিবার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত ‘লিডার্স সেশন’-এ ড. ইউনূস এই বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এটিই ছিল ড. ইউনূসের প্রথম বহুপক্ষীয় বৈঠক। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান। উদ্বোধনী নেতাদের অধিবেশনের প্রতিপাদ্য এবং সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘অ্যান এমপাওয়ার্ড গ্লোবাল সাউথ ফর এ সাসটেইনেবল ফিউচার’।
ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, গ্লোবাল সাউথের দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী তরুণ। তারা সমাজের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অংশ এবং একটি নতুন বিশ্ব গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি মনে করেন, তরুণ ও শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিগতভাবে অনেক সক্ষম এবং তারা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে।
ড. ইউনূস আরও বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও আর্থিক ব্যবস্থা চাকরিপ্রার্থী তৈরি ও কর্মসংস্থানের জন্য গড়ে উঠেছে। তবে শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুনভাবে সাজাতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো একসঙ্গে এটি করতে পারে, কারণ এই অঞ্চল তরুণদের সৃজনশীলতায় সমৃদ্ধ।
সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে তরুণদের সৃজনশীলতা ও শক্তির বিকাশে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে তিনি গ্লোবাল সাউথের জন্য সাধারণ কিছু সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব করার কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া, সকল পরিবেশগত ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলতে গ্লোবাল সাউথের নেতাদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
ড. ইউনূস বলেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি গ্লোবাল সাউথের নেতাদের ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ঢাকার বেশির ভাগ অংশ এখন বিশ্বের গ্রাফিতির রাজধানীতে পরিণত হয়েছে, যেখানে তরুণ শিক্ষার্থী এবং শিশুরা ৪০০ বছরের পুরোনো এই শহরের দেয়ালে ‘নতুন গণতান্ত্রিক’ বাংলাদেশের চিত্র এঁকে যাচ্ছে।
ড. ইউনূস ইতিহাস উদ্ধৃত করে বলেন, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশি ছাত্ররা প্রাণ দিয়েছিল, যা সারা বিশ্বে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছিল। এখন, ছাত্র-নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় বিপ্লব গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মর্যাদা, সমতা এবং অংশীদারত্বমূলক সমৃদ্ধির জন্য গ্লোবাল সাউথ জুড়ে যুবকদের অনুপ্রাণিত করছে।