ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগে ইউএসসিআইআরএফ-এর সুপারিশ
ভারতের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র)-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)। সংস্থাটি ভারতের বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ এনেছে। তবে এই সুপারিশকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত সরকার।
গত ২৬ মার্চ (মঙ্গলবার) ইউএসসিআইআরএফ তাদের ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন ২৭ মার্চ (বুধবার) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল মার্কিন কমিশনের সুপারিশকে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি ইউএসসিআইআরএফ-কে “আন্তর্জাতিক উদ্বেগের সংস্থা” (এনটিটি অফ কনসার্ন) হিসেবে চিহ্নিত করার আহ্বান জানান।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “ইউএসসিআইআরএফ পরিস্থিতির পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মূল্যায়ন করে। তারা তথ্য বিকৃত করে উপস্থাপন করছে এবং বারবার ভারতের বহুত্ববাদী সমাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে নিউইয়র্কে একজন শিখ আমেরিকান নাগরিককে হত্যার চেষ্টায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মার্কিন বিচার বিভাগ ভারতীয় কর্মকর্তা বিকাশ যাদবের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, তিনি এই হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এছাড়া, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগ করা হয়েছে, একজন খালিস্তানি নেতাকে হত্যার পেছনেও ভারত সরকারের হাত থাকতে পারে।
প্রতিবেদনে ভারতকে ‘কান্ট্রি অফ পার্টিকুলার কনসার্ন’ (সিপিসি) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই তালিকায় সাধারণত সেই দেশগুলোকে রাখা হয়, যেখানে সরকার গুরুতরভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে বা এমন লঙ্ঘনের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকে।
ভারতীয় সরকার বলছে, “১৪০ কোটি মানুষের এই দেশে প্রায় সব ধর্মের অস্তিত্ব আছে এবং এখানে বহু ধর্ম ও সম্প্রদায়ের সহাবস্থান রয়েছে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমরা কখনও আশাও করি না যে ইউএসসিআইআরএফ ভারতের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরবে। তারা কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বারবার ভুলভাবে উপস্থাপন করে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে।”
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুর হত্যাচেষ্টার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে একজন ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি একজন ভাড়াটে খুনি নিয়োগের চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এতটাই উদ্বিগ্ন হন যে, সিআইএ-র প্রধান উইলিয়াম বার্নস ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক অ্যাভ্রিল হেইনসকে ভারত সফরে পাঠানো হয়। ভারত সরকার তখন উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়।
এর আগে, ২০২৩ সালের জুনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ করেন, খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে হত্যার পেছনে ভারত সরকারের হাত ছিল। এই অভিযোগের পর ভারত ও কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক চরম উত্তেজনার মধ্যে পড়ে।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রেই ইতিবাচক হলেও সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই ইস্যুর প্রভাব নিয়ে বিতর্ক তীব্র হচ্ছে।
ভারত মার্কিন কমিশনের সুপারিশকে প্রত্যাখ্যান করলেও, এটি যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
—
[তথ্যসূত্র: রয়টার্স, বিবিসি]