খান ইউনিস, গাজা: ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় গাজার নাসের হাসপাতালে প্রাণ হারিয়েছেন হামাসের শীর্ষ নেতা ও সংগঠনটির অর্থবিষয়ক প্রধান ইসমাইল বারহুম। স্থানীয় সময় রোববার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায়, খান ইউনিসের হাসপাতালটিতে বিমান হামলা চালায় তেল আবিব। এতে ইসমাইল বারহুমের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীসহ আরও পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “গাজা অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের সমন্বিত অভিযানে নাসের হাসপাতালে ইসমাইল বারহুমকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, ইসমাইল বারহুম সম্প্রতি গাজায় হামাস সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। এর আগে এই দায়িত্ব পালন করছিলেন ইসমাইল হানিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইশাম দা-লিস, যিনি কয়েকদিন আগেই ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন।
গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েলের নতুন অভিযানের মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে হাসপাতালগুলো। ইতোমধ্যেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে গাজার একমাত্র ক্যান্সার হাসপাতাল। চিকিৎসা সেবার সুযোগ হারিয়ে আরও হাজারো মানুষ এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যমতে, চলমান ইসরায়েলি হামলায় উপত্যকায় মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার। শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকশ ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজায় স্বাস্থ্যসেবার ওপর আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলছে, মানবিক সংকটের এই চরম মুহূর্তে হাসপাতালগুলোর ওপর হামলা স্পষ্টতই যুদ্ধাপরাধের শামিল।
প্রায় দেড় বছর ধরে চলা এই যুদ্ধের ফলে গাজার অবস্থা চরম মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। খাদ্য, পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র সংকটে দিন কাটছে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবে ইসরায়েল আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। বিশ্ব নেতাদের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তাই গাজায় ইসরায়েলের নিষ্ঠুরতা চালিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
গাজায় ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও হাসপাতালগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর ঘটনায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের দাবি জানাচ্ছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। তবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।