ভারতে চিকেন মোমোর সঙ্গে কুকুরের মাংস খাওয়ানোর সন্দেহ
ভারতে রাস্তাঘাটের জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড মোমো নিয়ে নতুন এক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ উঠেছে যে, চিকেন মোমোর সঙ্গে কুকুরের মাংস মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি সামনে আসার ফলে প্রশাসনও তৎপর হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিভিন্ন সূত্র থেকে অভিযোগ আসতে শুরু করে যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চিকেন মোমোর পরিবর্তে অন্য মাংস ব্যবহার করছে। স্থানীয় কিছু খাদ্য পরিদর্শন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই ও বেঙ্গালুরুর কিছু এলাকায় রাস্তার পাশের স্টলে বিক্রি হওয়া মোমোতে সন্দেহজনক উপাদানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
খাদ্য ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কিছু গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এমন কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে যা এই অভিযোগকে সত্যতার কাছাকাছি নিয়ে যায়। বেশ কয়েকটি স্থানে অপরিচিত মাংসের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে ল্যাব পরীক্ষাগুলো।
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এবং স্বাস্থ্য বিভাগ ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। দিল্লি ও কলকাতার বেশ কিছু স্টলে আকস্মিক অভিযান চালানো হয়েছে এবং বেশ কিছু সন্দেহজনক নমুনা ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
একজন খাদ্য পরিদর্শক জানান, “আমরা রাস্তার পাশে বিক্রি হওয়া মোমোর নমুনা সংগ্রহ করেছি এবং বিশ্লেষণের জন্য পাঠিয়েছি। যদি এতে অবৈধ কোনো মাংস পাওয়া যায়, তাহলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত মোমো খান, তারা এখন দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
কলকাতার এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, “আমি প্রায় প্রতিদিন বন্ধুর সঙ্গে মোমো খেতে যাই। এই খবর শোনার পর থেকে মোমো খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। খাবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।”
অন্যদিকে, রাস্তার ফুড স্টল এবং ছোট রেস্টুরেন্টের মালিকরা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করছেন। তারা বলছেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে বড় করে দেখানো হচ্ছে এবং এটি তাদের ব্যবসার ক্ষতি করছে।
দিল্লির এক মোমো বিক্রেতা জানান, “আমরা শুধু নির্ভরযোগ্য দোকান থেকে মাংস কিনি। কুকুরের মাংস খাওয়ানোর কোনো প্রশ্নই ওঠে না।”
ভারতে খাদ্য নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, যদি কেউ খাদ্যে ভেজাল মিশ্রিত করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। খাদ্য নিরাপত্তা আইনের ৫৯ ধারা অনুযায়ী, যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিকর খাদ্য বিক্রি করে, তাহলে তাকে ৬ মাস থেকে আজীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। সাধারণ জনগণ যেন অস্বাস্থ্যকর ও অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হওয়া খাবার এড়িয়ে চলে, সে ব্যাপারে তাদের সতর্ক হতে হবে। সরকারকেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে।
মোমোর মতো জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুডে ভেজাল মাংসের ব্যবহার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রশাসন ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে গ্রাহকদেরও সচেতন থাকতে হবে এবং নিরাপদ খাবার গ্রহণের জন্য বিশ্বস্ত উৎস থেকে খাবার কেনা উচিত।