মানিকগঞ্জে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় ছাত্রদল নেতা গ্রেপ্তার
মানিকগঞ্জে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে চাকরিচ্যুত ও মারধরের হুমকি এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ফজলুল করিম শামীম (৩৫) নামে এক ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি ফ্রান্স শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে জেলা যুবদলের কর্মী।
সোমবার (১৭ মার্চ) সকালে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এসএম আমান উল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে রোববার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ শহরের শহীদ রফিক সড়কের উত্তরা ব্যাংক মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ সূত্র জানায়, রোববার বিকেলে শহরের উত্তরা এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে ছিলেন কনস্টেবল শাহীন। ফজলুল করিম শামীম নিজেকে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয় দিয়ে ওয়ান-ওয়ে সড়ক দিয়ে রিকশা নিয়ে যেতে চান। ট্রাফিক পুলিশ সদস্য শাহীন তাকে নিয়ম মানতে বললে শামীম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন। এ সময় আশপাশের দোকানদার ও পথচারীরা বিষয়টি প্রত্যক্ষ করলেও শামীম প্রকাশ্যে পুলিশ সদস্যকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন।
ঘটনার একপর্যায়ে ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে শামীম তাদের সঙ্গেও অশালীন আচরণ করেন। পরবর্তীতে শামীম মোবাইল ফোনে কয়েকজনকে ঘটনাস্থলে ডাকেন, যারা গিয়ে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন। তবে শামীমের আচরণ আরও উগ্র হয়ে ওঠায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা তাকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন আহমেদ কবির বলেন, “শামীম জেলা যুবদলের কোনো নেতা নন, তিনি শুধুমাত্র একজন কর্মী। আমি বিষয়টি মীমাংসা করে তাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম ট্রাফিক পুলিশকে।”
জেলা যুবদলের সদস্য সচিব তুহিনুর রহমান তুহিন বলেন, “ফজলুল করিম শামীম ফ্রান্স শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। ঘটনাটি ইফতারের আগে ঘটেছে এবং এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি, যা ভুল বোঝাবুঝির কারণে সৃষ্টি হয়েছে। আমরা দলীয়ভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুসারে পদক্ষেপ নেব।”
মানিকগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (এডমিন) আব্দুল হামিদ বলেন, “শহরের যানজট নিরসনে শহীদ রফিক সড়কটি ওয়ান-ওয়ে করা হয়েছে। বিকেলে শামীম ওয়ান-ওয়ের নিয়ম ভেঙে রিকশা নিয়ে যেতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশ তাকে বাধা দেয়। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের কাজে বাধা দেন এবং হুমকি দেন। পরবর্তীতে তাকে থানায় হস্তান্তর করা হয়।”
মানিকগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক দেবদুলাল বলেন, “দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে শামীমকে আটক করা হয়েছে।”
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এসএম আমান উল্লাহ বলেন, “শামীমের বিরুদ্ধে দায়িত্বরত পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ ও সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে মামলা হয়েছে। আজ তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।”
এ মামলার পরবর্তী আইনি কার্যক্রম কীভাবে এগোবে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারি রাখছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। পুলিশের দাবি, নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে, অন্যদিকে বিএনপির স্থানীয় নেতারা বিষয়টি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছেন।
বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত চলবে এবং আদালতের নির্দেশনার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।