ঢাকা, (তারিখ): মোবাইল কলড্রপ এবং দুর্বল নেটওয়ার্কের সমস্যার সমাধানে ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের ২৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলামে তুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তবে নির্ধারিত মূল্য নিয়ে মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে দেশে চারটি মোবাইল অপারেটর ১৮ কোটি ৬৬ লাখ গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। তবে তরঙ্গের অপর্যাপ্ততার কারণে মানসম্মত ভয়েস কল ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে অপারেটররা।
গ্রামীণফোনের ৮.৫ কোটি গ্রাহকের জন্য তরঙ্গের হার মাত্র ০.৭%
রবির ৫.৮৩ কোটি গ্রাহকের জন্য তরঙ্গের হার ১%
বাংলালিংকের ৪.২৪ কোটি গ্রাহকের জন্য তরঙ্গের হার ১%
টেলিটকের ৬৫ লাখ গ্রাহকের জন্য তরঙ্গের হার ৪.৭%
এ অবস্থায় সেবার মান উন্নত করতে নতুন তরঙ্গ নিলামের উদ্যোগ নিয়েছে বিটিআরসি।
৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ড তুলনামূলক নিম্ন-ফ্রিকোয়েন্সি হওয়ায় বিস্তৃত এলাকা কভার করতে পারে। এটি কম শক্তি খরচে গ্রাম ও শহরের মধ্যে সমভাবে নেটওয়ার্ক বিস্তার করতে সক্ষম। বিশেষ করে, ভবনের ভেতরে শক্তিশালী সিগন্যাল পৌঁছানোর ক্ষমতা থাকায় শহরের অফিস ও বাসাবাড়িতে উন্নত নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
আগামী জুন মাসে অনুষ্ঠেয় নিলামে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের মূল্য ২৬৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে বিটিআরসি। অপারেটররা ১০ কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের সুযোগ পেলেও এই দামকে তারা অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক বলে দাবি করছে।
রবির সিনিয়র ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল রেগুলেশনস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস) অনামিকা ভক্ত বলেন,
“প্রতি এক-দুই বছর পর পর অতিরিক্ত মূল্যে তরঙ্গ কেনা ক্ষুদ্র অপারেটরদের জন্য কঠিন হয়ে যায়।”
গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তানভীর মোহাম্মদ জানান,
“উচ্চ মূল্যে তরঙ্গ কিনলে সেটির বিনিয়োগ ফেরত পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। যদি দাম যৌক্তিক হয়, তাহলে অপারেটরদের জন্য তা সুবিধাজনক হবে।”
বিটিআরসি অনড়, সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার সহকারী
অপারেটরদের আপত্তির পরও বিটিআরসি তাদের নির্ধারিত দাম কমাতে রাজি নয়। সংস্থাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন,
“সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তরঙ্গের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। হঠাৎ করে দাম বাড়ানো বা কমানো সঠিক নয়।”
তবে বিষয়টি সমাধানে এগিয়ে এসেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানিয়েছেন,
“অপারেটরদের আপত্তি বিবেচনায় নিয়ে তরঙ্গের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উচ্চ মূল্যে তরঙ্গ কেনা বাধ্যতামূলক হলে মোবাইল অপারেটররা বিনিয়োগে পিছিয়ে পড়বে। এর প্রভাব সরাসরি গ্রাহকদের ওপর পড়বে, ফলে কলড্রপ, ধীরগতির ইন্টারনেট এবং খরচ বাড়ার সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
এখন দেখার বিষয়, বিটিআরসি এবং মোবাইল অপারেটরদের মধ্যকার এই বিরোধের কী ধরনের সমাধান হয়, এবং এটি গ্রাহকদের জন্য কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।