ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় পুকুর খননের সময় উদ্ধার হলো ৬০ রাউন্ড বুলেট
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে পুকুর খননের সময় ৬০ রাউন্ড পরিত্যক্ত রাইফেলের বুলেট উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে এ ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ধোবাউড়ার গোবিন্দপুর গ্রামের এখলাছ উদ্দিন ও তার ভাইদের মালিকানাধীন একটি পুকুর সম্প্রতি খননের কাজ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার, শ্রমিকরা মাটি সরানোর সময় ৭-৮ ফুট গভীরে গিয়ে হঠাৎ বুলেটের অস্তিত্ব টের পান। বিষয়টি দেখে তারা কাজ বন্ধ করে দেন। এরপর, শুক্রবার এলাকায় কাজ বন্ধ থাকায় কিছু শিশু সেখানে খেলতে গিয়ে মাটির নিচ থেকে কয়েকটি বুলেট পায় এবং সেগুলো বাড়িতে নিয়ে যায়।
এতে করে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে, শনিবার দুপুর ১টার দিকে ধোবাউড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আশপাশের কয়েকটি বাড়ি থেকে ৬০ রাউন্ড বুলেট উদ্ধার করে। তবে, এই বুলেটগুলো কীভাবে সেখানে এল, কারা রেখেছিল, এবং কী উদ্দেশ্যে তা রাখা হয়েছিল—এ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন সরকার বলেন, “আমরা পরিত্যক্ত অবস্থায় ৬০ রাউন্ড রাইফেলের বুলেট উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছি। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
এলাকাবাসীরা জানান, এর আগে এমন কোনো ঘটনা তারা দেখেননি। কেউ কেউ ধারণা করছেন, এটি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের অস্ত্র বা পুরনো কোনো অপরাধচক্রের গোপন অস্ত্রভাণ্ডারের অংশ হতে পারে। তবে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের জন্য স্থানীয় প্রশাসন তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
ধোবাউড়া উপজেলা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখানে সীমান্ত অপরাধ, চোরাচালান এবং অন্যান্য অপরাধ কর্মকাণ্ডের আশঙ্কা থাকে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উদ্ধার হওয়া বুলেটগুলো পুরনো হলেও এটি বড় কোনো চক্রের সম্পৃক্ততা ইঙ্গিত করতে পারে।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে এর আগেও এ ধরনের অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। বিশেষ করে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত পুরনো অস্ত্রশস্ত্র অনেক এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে, এই বিশেষ ঘটনাটি সাম্প্রতিক হওয়ায় পুলিশ বিশেষ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত চালাচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বুলেটগুলোর ধরন ও উৎপাদনের সময়কাল বিশ্লেষণ করা হবে, যাতে বোঝা যায়, এগুলো কত পুরনো এবং কারা এগুলো এখানে রেখেছিল।
এই ঘটনার পর ধোবাউড়া থানার পুলিশ সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করেছে এবং স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে বলেছে। যদি কেউ সন্দেহজনক কিছু দেখতে পান, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পুকুর খননের সময় এমন একটি রহস্যজনক আবিষ্কার স্থানীয়দের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের তদন্তের মাধ্যমে বুলেটগুলোর প্রকৃত উৎস এবং সম্ভাব্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন নজরদারি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
এখন দেখার বিষয়, এই তদন্ত কী নতুন কোনো অপরাধচক্রের সন্ধান দিতে পারে কিনা। আপাতত, সবাই পুলিশের তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন।