মাগুরার শিশু ধর্ষণ: ৯০ দিনের মধ্যে বিচার ও রায় কার্যকর করার আহ্বান
মাগুরার হৃদয়বিদারক শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে ৯০ দিনের মধ্যে রায় কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “আমরা আর ৯১তম দিন দেখতে চাই না।”
গত শনিবার (১৫ মার্চ) নিহত শিশু আছিয়ার কবর জিয়ারত শেষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় এ মন্তব্য করেন জামায়াত নেতা। এরপর তিনি নিহত শিশুটির পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “এদেশের আইনে এক সপ্তাহের মধ্যে বিচার কার্যকর করা সম্ভব নয়, তবে ৯০ দিনের মধ্যে যেন বিচার ও দণ্ড কার্যকর হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যারা এমন জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হবে, তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে এবং তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে হবে। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে সমাজে এ ধরনের অপরাধ আরও বাড়বে।”
শিশুটির গ্রামের বাড়ি জারিয়াতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন জামায়াত আমির। তিনি আশ্বস্ত করেন যে, পরিবারটি যেন স্বচ্ছলভাবে চলতে পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, “আমরা চাই, এই পরিবার যেন সুবিচার পায় এবং ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়া যেন দ্রুত শেষ হয়।”
৬ মার্চ, শিশুটির বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয় আট বছরের ছোট্ট শিশু আছিয়া। ধর্ষণের পর গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক সপ্তাহ নিবিড় পরিচর্যায় থাকার পর, অবশেষে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সে মারা যায়।
এই ঘটনায় নিহত শিশুর পরিবারের দায়ের করা মামলায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত হিট্টু শেখকে আদালতে হাজির করা হলে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। অন্য তিনজনকে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
দেশের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় ধর্ষণের মতো সংবেদনশীল মামলার নিষ্পত্তি অনেক সময় দীর্ঘ হয়। তবে জামায়াতের আমির মনে করেন, এ ধরনের জঘন্য অপরাধের বিচারে দ্রুত রায় দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, “আইনি জটিলতায় অপরাধীদের ছাড় দেওয়া যাবে না। দোষীদের দ্রুত সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ন্যায়বিচারের দাবিতে সরব হয়েছেন অনেকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধে আরও কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। শিশুদের প্রতি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পরিবার, সমাজ ও প্রশাসনকে একযোগে কাজ করতে হবে।
শিশু আছিয়ার নির্মম হত্যাকাণ্ড শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি আমাদের সমাজের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে দ্রুত বিচার এবং কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। জামায়াত আমিরের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।