ঢাকা, ১৫ মার্চ: সারাদেশে সাম্প্রতিক হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচারসহ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বামপন্থী ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলো একযোগে সমাবেশ করেছে। শনিবার (১৫ মার্চ) সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, যুব ইউনিয়নসহ একাধিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এতে অংশ নেয়।
সমাবেশ থেকে গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও তা পরে স্থগিত করা হয়। নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহিন শাহরিয়ার রেজা বলেন, ‘৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে দেশে হত্যা, ধর্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারই দায়ী। মব জাস্টিসের নামে দেশে উগ্রবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে ব্যবহার করে কোনো স্বৈরাচার যেন সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে আমাদের সর্তক থাকতে হবে। জুলাই মাসের হত্যাকাণ্ডের বিচার আজও হয়নি। ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আমরা নারীর স্বাধীন চলাচল ও সমাজের বৈষম্য দূর করার আশায় রাস্তায় নেমেছিলাম। অথচ ৫ আগস্টের পর সেই নারীদেরই লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে। কিছু মহল নারীদের চলাফেরা, পোশাক ও জীবনধারার ওপর বিধিনিষেধ চাপিয়ে দিতে চাইছে। এটি প্রতিহত করতেই আমরা আজকের এই সমাবেশে দাঁড়িয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই দেশে তনু, মুনিয়া, সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয়নি। প্রতি ১০ মিনিটে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আমরা অবাক হই—এত লড়াই-সংগ্রামের পরও কেন বিচার হয় না?’
সমাবেশ থেকে উত্থাপিত ৭ দফা দাবি:
১. দেশে চলমান ধর্ষণ, নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
2. স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।
3. জুলাই-আগস্টের সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।
4. মন্দির-মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
5. চট্টগ্রামের আইনজীবী আলিফ হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
6. সাগর-রুনি, তনু, মুনিয়া, আফসানাসহ আওয়ামী শাসনামলের সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।
7. হিন্দু ও আদিবাসীদের ওপর হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
সমাবেশে উদীচীর সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন ও বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন। তারা সরকারের প্রতি দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধের আহ্বান জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।