উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও মানবিক বার্তা
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগে আয়োজিত এই ইফতার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তারা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার বার্তা পৌঁছে দেন। শুক্রবার (১৪ মার্চ) উখিয়া শরণার্থী শিবিরে এই বিশাল ইফতার আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার দুপুরে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উখিয়া শরণার্থী ক্যাম্পে পৌঁছান। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের দুঃখ-দুর্দশা শোনেন এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নেন। তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের একটি শিক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং তাদের জীবনযাত্রার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চান।
ক্যাম্পে অবস্থানকালে গুতেরেস বলেন, “রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন। তাদের টেকসই সমাধানের জন্য আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে।”
পরে বিকেলে উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা শোনেন। ক্যাম্পে অবস্থানকালে তিনি বলেন, “মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গাদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হওয়া।”
বিকেলে বিশাল পরিসরে এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। এতে ভাত, ডাল, সবজি, খেজুর, শরবত ও অন্যান্য ইফতার সামগ্রী পরিবেশন করা হয়। উপস্থিত রোহিঙ্গারা জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইফতার করতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন। অনেকেই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা কষ্টের মধ্যে থাকলেও এমন আয়োজন আমাদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দেয়।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আন্তোনিও গুতেরেসকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ফারুক ই আজম তাদের স্বাগত জানান। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান গুতেরেস, যেখানে তিনি বেশ কয়েকটি কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টা খুরুশকূল জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যোগ দেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে জাতিসংঘ। গুতেরেস এই সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা তুলে ধরতে চান। তিনি বলেন, “আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য একটি স্থায়ী সমাধান চাই, যাতে তারা নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে।”
বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় কাজ করছে। তবে তহবিলের অভাব, নিরাপত্তা সংকট ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব এই সংকট নিরসনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভাষণে বলেন, “বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে এই সংকটের সমাধান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। আমাদের উচিত একসঙ্গে কাজ করে একটি টেকসই সমাধানের পথ বের করা।”
ইফতার অনুষ্ঠান শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা ক্যাম্প ত্যাগ করেন এবং ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। আন্তোনিও গুতেরেসের চার দিনের সফরের অংশ হিসেবে তিনি আরও বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক বৈঠকে অংশ নেবেন। আগামী রোববার সকালে তার ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
এই সফর ও ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এই সফর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। মানবিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আন্তোনিও গুতেরেস।