বাগেরহাটে যুবদল নেতা জসিম উদ্দিনের ওপর হামলা
বাগেরহাট পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিনের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিপক্ষের হামলায় তাঁর দুই পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৩ মার্চ) রাতে শহরের বাসাবাটি এলাকায় এই নৃশংস হামলার শিকার হন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বুধবার সন্ধ্যায় স্থানীয় শ্রমিক দল নেতা সেলিম ভূঁইয়ার ভাই আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর সহযোগীরা শহরের নাগেরবাজার এলাকায় আজিম খান নামে এক ব্যক্তিকে মারধর করেন। আজিম খান ছিলেন যুবদল নেতা জসিম উদ্দিনের প্রতিবেশী। পরে রাত ৮টার দিকে বাসাবাটি এলাকায় বগা ক্লিনিকের সামনে জসিম উদ্দিন আজিমের কাছে এই হামলার কারণ জানতে চান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর অনুসারীরা জসিম উদ্দিনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
প্রাণ রক্ষার জন্য জসিম উদ্দিন আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে একটি স্থানীয় বাড়িতে ঢোকেন। কিন্তু হামলাকারীরা ওই বাড়ির ফটক ও দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং তাঁকে নির্মমভাবে মারধর করে। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কোপানো হয় এবং তাঁর দুই পায়ের রগ কেটে ফেলা হয়।
হামলার পরপরই জসিমের আত্মীয়স্বজনরা তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাঁকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
জসিম উদ্দিনের মামাতো ভাই সাইফুল ইসলাম পিঞ্জুর বলেন, “প্রতিবেশীর ঘরে আশ্রয় নিয়েও রক্ষা পায়নি জসিম। তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। আমরা খুলনা থেকে ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।”
এদিকে, প্রথমে হামলার শিকার হওয়া আজিম খানের স্ত্রী নাদিরা বেগম বলেন, “আজিম ও তার লোকজন এর আগেও আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি-ধমকি দিয়েছে। গতকাল হামলার সময় আজিমের সঙ্গে কয়েল ফারুক, মাসুদ, মুরাদ, অভি, শাওনসহ ১৫-১৬ জন ছিল। আমরা এই হামলার বিচার চাই।”
এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা। তাঁরা হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মাছ ব্যবসায়ী মো. ওসমান বলেন, “জসিমকে মারধর করার পর আজিম ও তাঁর লোকজন এসে মাছ ব্যবসায়ী কুটুকে মারধর করেছে। এর আগেও তারা একাধিকবার ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা তাদের বিচার চাই।”
বাগেরহাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহমুদ উল হাসান জানান, “এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, অপরাধীরা যদি আইনের আওতায় না আসে, তাহলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে।
সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে, বাগেরহাটের পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং সম্ভাব্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে।
এ হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফলাফল, আবার কেউ মনে করছেন এটি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে সংঘটিত হয়েছে। তবে যেই কারণেই হোক, এমন বর্বরোচিত হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এই হামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনাই এখন স্থানীয় প্রশাসনের প্রধান চ্যালেঞ্জ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
বাগেরহাটে ঘটে যাওয়া এই নৃশংস হামলা আবারও প্রমাণ করে যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা রোধ করা যায়। সাধারণ নাগরিকরাও আশা করছেন, এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হবে এবং দোষীরা শাস্তি পাবে।