বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ে সংঘর্ষ চলাকালে ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরার আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর এমবিএর শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। মৃত্যুর আগে ধারণকৃত একটি ভিডিওতে তাকে আন্দোলনকারীদের মধ্যে পানির বোতল বিতরণ করতে দেখা যায়, যা পরে ভাইরাল হয়ে যায়। এই ভিডিওর কথা উল্লেখ করে মুগ্ধর বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত ডয়চে ভেলেকে জানান, তার ভাই এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ছোটবেলা থেকেই সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন।
মুগ্ধর মতই আরেক শিক্ষার্থী, গোলাম নাফিজ, ৪ আগস্ট কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় প্রাণ হারান। নাফিজের বাবা গোলাম রহমান জানান, তিনি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত ছেলের ছবির মাধ্যমে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। সেই ছবি দেখে তিনি ছেলের লাশ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গ থেকে সংগ্রহ করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের সময় কতজনের মৃত্যু ঘটেছে, তা নিয়ে সরকারি কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার মতে, আন্দোলনের সময়ে সংঘর্ষে অন্তত ৫৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, এই সংখ্যা ছয়শ’রও বেশি।
গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী হত্যার অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে এবং আরও মামলা হতে পারে বলে জানা গেছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান গোলাম নাফিজের বাবা। আইনজীবীরা বলছেন, এসব হত্যার বিচার বাংলাদেশে প্রচলিত আইন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে করা সম্ভব।
জাতিসংঘ এক প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী আন্দোলন দমন করতে অপ্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগ করেছে। জাতিসংঘ এ নিয়ে একটি তদন্ত দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুগ্ধর ভাই দীপ্ত জানান, তারা এখন এই তদন্তের অপেক্ষায় আছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে স্বজনহারা পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন।