নিজস্ব প্রতিবেদক
সাবেক শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে একাধিক পদ দখল, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, সিনিয়র সচিব থাকাকালীন তিনি একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করে মাসে লাখ লাখ টাকা বেতন ও সম্মানী গ্রহণ করেছেন। এছাড়া, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বদলি ও চাকরিচ্যুতির ঘটনাও ঘটিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ১৪৫ জনের মধ্যে বিশেষ বিবেচনায় পদোন্নতি পাওয়া সচিবদের মধ্যে ছিলেন জাকিয়া সুলতানা। ২০২১ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি গবেষণা কাউন্সিলে দায়িত্ব পাওয়ার পর দ্রুত বদলি হয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ে চলে আসেন। নানা অনিয়মের অভিযোগের কারণে ২০২২ সালে তাকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বজায় রাখেন। ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও তিনি এক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার ছত্রছায়ায় একই দফতর আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেন।
জাকিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে কফকোর (KAFCO) কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (CSR) তহবিলের অপব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে। সংস্থাটির সাবেক চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার মো. হাবিবুল্লাহ মনজুর দাবি, অবৈধ নিয়োগে সায় না দেওয়ায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “সিএসআর তহবিল ব্যবহার করে শিল্প মন্ত্রণালয়, সুগার করপোরেশন, পুলিশ সদস্যসহ বিভিন্ন খাতে অনিয়ম হয়েছে। জাকিয়া সুলতানা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিএসআর নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “জাকিয়া সুলতানা যেসব খাতে অর্থ ব্যয় করেছেন, তার অধিকাংশই কোম্পানি আইন ও আয়কর আইনের পরিপন্থী। পরে তিনি নতুন সিএসআর নীতি তৈরি করে এসব কার্যক্রম বৈধ করার চেষ্টা করেন।”
তথ্য অনুসারে, শিল্প সচিবের পাশাপাশি কাফকোর পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন জাকিয়া সুলতানা। একইসঙ্গে তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (CEO) অতিরিক্ত দায়িত্বও গ্রহণ করেন। এতে বোর্ডের সম্মানীর পাশাপাশি প্রতি মাসে প্রধান নির্বাহীর বেতন হিসেবেও ২ লাখ টাকা গ্রহণ করতেন। দীর্ঘদিন এই পদে কোনো নতুন নিয়োগ দেননি তিনি, যা প্রশাসনিক অনিয়মের শামিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
একজন কোম্পানি আইনজীবী বলেন, “কোনো সরকারি কর্মকর্তা একইসঙ্গে তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিনির্ভর করার একটি কৌশল।”
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (TIB) একে স্বেচ্ছাচারিতার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এটি এক ব্যক্তির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা দিতে পারে। জাকিয়া সুলতানার অনিয়ম তদন্ত করা প্রয়োজন।”
সাবেক আমলারা বলছেন, প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব কুদরত-ই-খুদা বলেন, “সরকারি কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন আইন রয়েছে, সেগুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ করা জরুরি।”
জাকিয়া সুলতানার স্বামী, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আতিকুল ইসলামও অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে পাঁচ আগস্টের আগে বাধ্যতামূলক অবসরে যান।
সাবেক শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানার সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।