ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুরের পর এবার নতুন আতঙ্কের নাম মিরপুর। চুরি, ডাকাতি আর খুনখারাবির ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
গতকাল শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর ১০ নম্বর এ ব্লকের ২০ নম্বর লাইনে সংঘবদ্ধ একদল ডাকাত এক রাতে ছয়টি দোকান ও দুটি বাসায় হানা দেয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ভোর রাত ৪টা ২০ মিনিটে একটি প্রাইভেটকার থেকে তিন ব্যক্তি নেমে ‘মা মনি’ স্টোর নামে একটি মুদি দোকানের তালা কেটে চুরি করে। দোকানের মালপত্র ও নগদ টাকা লুট করে চলে যাওয়ার পর তারা আবার ফিরে এসে ক্যাশ বাক্স ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায়। একই কৌশলে পাশের আরও তিনটি দোকান ও দুটি বাসায় ডাকাতি করে চক্রটি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্প্রতি মিরপুর এলাকায় চুরি ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পাঁচজন গ্রেপ্তার
এর আগে পল্লবী এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ই ব্লকের ৫ নম্বর রোডে শহীদ জিয়া কলেজের উত্তর পাশের রাস্তায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—সোহেল হাওলাদার (২৯), মো. রাজা (৩২), শাহাদাৎ হোসেন (৩৬), আবদুল মান্নান (২৯) ও মো. সুজন (৩০)। পুলিশের দাবি, তারা সক্রিয় ডাকাত দলের সদস্য। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ছুরি, একটি রামদা ও চারটি ককটেল উদ্ধার করা হয়। পল্লবী থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, অভিযানের সময় আরও তিন-চারজন পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে যে, তারা ডাকাতির জন্য একত্র হয়েছিল।
অন্যদিকে, মোহাম্মদপুরেও অপরাধপ্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকেই এই এলাকা উত্তাল ছিল। রাজধানীর পাঁচটি সংঘাতপূর্ণ স্থানের মধ্যে মোহাম্মদপুর অন্যতম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এই এলাকায় ছিনতাই-ডাকাতি নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গত কয়েক মাসে মোহাম্মদপুরে অন্তত ৯ জন নিহত ও প্রায় অর্ধশত আহত হয়েছেন।
স্থানীয়দের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় অপরাধীরা আরও সাহসী হয়ে উঠছে। অনেকে রাতের বেলায় চলাফেরা করতে ভয় পাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই প্রবণতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে ক্রমবর্ধমান অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের টহল বাড়ানো ও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তিগত নজরদারি, সিসিটিভি ক্যামেরার কার্যকারিতা বাড়ানো এবং কমিউনিটি পুলিশের কার্যক্রম জোরদার করলে অপরাধের লাগাম টানা সম্ভব হবে।
রাজধানীর অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।