ঢাকা: পলাতক হাসিনা সরকারের সময়ে বাংলাদেশ থেকে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই এখনও ভারতের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন দেশে ফিরে এলেও এখনও ১৫৮ জনের কোনো সন্ধান মেলেনি।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজধানীর উত্তরা থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন। দীর্ঘ ৬২ দিন পর ১১ মে ভারতের মেঘালয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে এবং অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। ৯ বছর পর ২০২৩ সালে আদালতে খালাস পেলেও তিনি এখনও দেশে ফিরতে পারেননি।
একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীর ক্ষেত্রেও। ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর সাদা পোশাকধারী পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি ভারতের কারাগারে পাঁচ বছর বন্দি ছিলেন। তিনি জানান, তাকে অপহরণ করে নির্যাতন করা হয় এবং পরে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে মুক্তি পেয়ে তিনি দেশে ফেরেন।
মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ১৫৮ জনের এখনও সন্ধান মেলেনি। তাদের মধ্যে অনেকেই ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান চ্যানেল ২৪-কে জানান, বাংলাদেশের গুমের পেছনে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পুরোপুরি অমূলক নয়। তিনি আরও বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব বিস্তারের নজির রয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে এক ধরনের সমঝোতার মাধ্যমে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবিরের মতে, এ ধরনের ঘটনা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। গুম কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, নিখোঁজদের অনেকেই এখনও ভারতের কারাগারে রয়েছেন।
গুম কমিশন বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে তৎপরতা চালিয়ে বন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।