ঢাকা, ২১ ফেব্রুয়ারি: উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় পাঁচ বাংলাদেশির জন্য। লিবিয়ায় পাচারকারীদের হাতে বন্দি হয়ে চরম নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাদের। অবশেষে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দেশে ফিরেছেন তারা।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোর সাড়ে ৫টায় টার্কিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে আলজেরিয়া থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ঢাকার মোস্তাকিম সরকার, শেরপুরের মোজাম্মেল হক, মাদারীপুরের জিহাদ ফকির, রোমান হাওলাদার ও ইয়াসিন হাওলাদার।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য অনুযায়ী, দালালদের প্রলোভনে পড়ে তারা লিবিয়ায় পাড়ি জমান। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পরই ভয়ংকর বাস্তবতার মুখোমুখি হন। লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে মানব পাচারকারীরা তাদের জিম্মি করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। মুক্তিপণের জন্য তাদের পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয় এবং টাকা না পেলে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
মুক্তিপণের টাকা পরিশোধের পর পাচারকারীরা তাদের ইউরোপ পাঠানোর নাম করে নৌকায় তুলে দেয়। কিন্তু মাঝসমুদ্রে ইঞ্জিন বিকল হয়ে বিপদের মুখে পড়ে তারা।
নৌকাটি বিকল হয়ে যাওয়ার পর কয়েকদিন পানির মধ্যেই ভাসতে থাকেন এই পাঁচ বাংলাদেশি। একসময় তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করে এবং আলজেরিয়ার সীমান্তে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তারা বিভিন্ন মেয়াদে কারাবন্দি থাকেন।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং আলজেরিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে তাদের দেশে ফেরানো সম্ভব হয়।
মাদারীপুরের ইয়াসিন হাওলাদার বলেন,
“লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে বন্দি ছিলাম। আমার পরিবার ঋণ করে, জমি বন্ধক রেখে এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার নিয়ে মোট ২৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়েছে। এখন আমাদের কিছুই অবশিষ্ট নেই।”
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) পরিদর্শক শাহ আলম মৃধা বলেন,
“দেশ ছাড়ার পর এই বাংলাদেশিরা যে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, তা বর্ণনাতীত। মানব পাচার রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”