ঢাকা, বুধবার: দেশের শীর্ষ অলিগার্কদের ব্যাংক লুট, কর ফাঁকি ও অর্থপাচারের ভয়াবহ কাহিনী উন্মোচন করেছেন দুই আয়কর কমিশনার। বিশেষভাবে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের সম্পৃক্ততা বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম বড় ব্যাংকিং স্ক্যাম হিসেবে উঠে এসেছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে আয়কর গোয়েন্দাদের কর্মশালায় এসব তথ্য প্রকাশ করেন তারা।
আয়কর কমিশনারদের ভাষ্যমতে, এস আলম গ্রুপ একাই দেশের অর্ধডজনের বেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে, যার একটি বিশাল অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইসি) এই অর্থপাচার ও কর ফাঁকির বিষয়টি তদন্ত করছে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দুই লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশেষভাবে উঠে এসেছে, এস আলম সিঙ্গাপুরে তার দুই ছেলের নাগরিকত্ব কেনার জন্য শত কোটি টাকা ব্যয় করেছেন।
আয়কর গোয়েন্দারা সতর্ক করেছেন যে, রাজনৈতিক শক্তি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অলিগার্করা আবারও অবৈধ উপায়ে সম্পদ আহরণের চেষ্টা করবে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এসব অবৈধ লেনদেন এখনো অব্যাহত রয়েছে বলেও তারা জানান।
একই কর্মশালায় সিআইসি মহাপরিচালক জানান, সম্প্রতি এক ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ১২১ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া এক শীর্ষ ধনীর স্ত্রীর লকার থেকে ১৫ কোটি টাকার হীরা উদ্ধার হওয়ার ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে।
এনবিআর চেয়ারম্যানের মতে, যদি অর্থপাচার ও কর ফাঁকি রোধ করা না যায়, তবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এ বিষয়ে কর কর্মকর্তারা ব্যাংক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অলিগার্কদের ব্যাংক লুট, কর ফাঁকি ও অর্থপাচার বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। আয়কর গোয়েন্দারা জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে দুর্নীতিবাজরা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে পুনরায় অবৈধ কার্যক্রমে লিপ্ত হতে না পারে।