নিজস্ব প্রতিবেদক
টানা লোকসানে থাকা আইএফআইসি মানি ট্রান্সফার (ইউকে) লিমিটেড পরিদর্শনের নামে লন্ডনে বিলাসবহুল ভ্রমণে যাচ্ছেন আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের সদস্যরা। ব্যাংকের অর্থেই তারা বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করবেন এবং বিপুল অঙ্কের টিএ/ডিএ বিল গ্রহণ করবেন। এ সফরে ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ পাঁচ পরিচালক ও কোম্পানি সচিব অংশ নিচ্ছেন, যেখানে খরচ হবে প্রায় ৭৯ লাখ টাকা।
২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত আইএফআইসি মানি ট্রান্সফার (ইউকে) লিমিটেড বছরের পর বছর লোকসান গুনছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয়েছে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার বেশি। শুধুমাত্র ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) লোকসান হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা।
এরপরও এ লোকসানি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের জন্য পরিচালনা পর্ষদকে লন্ডনে পাঠানোয় বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা উঠেছে।
গত ৮ জানুয়ারি আইএফআইসি ব্যাংকের ৯০৬তম বোর্ড সভায় লন্ডন সফরের অনুমোদন দেওয়া হয়। সফরে বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণের জন্য ব্যাংকের অর্থে ব্যয় হচ্ছে:
প্রত্যেকের বিমান ভাড়া: ৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা
ছয়জন পরিচালকের বিমান ভাড়া: ২৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা
কোম্পানি সচিবের বিমান ভাড়া: ব্যাংকই বহন করবে
এ ছাড়া প্রত্যেক পরিচালক প্রতিদিন ৮৫০ ডলার ও চেয়ারম্যান ১,১০০ ডলার করে টিএ/ডিএ বিল নেবেন। এতে মোট ৫২ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা ব্যয় হবে।
সব মিলিয়ে ব্যাংকের খরচ দাঁড়াচ্ছে ৭৮ লাখ ৯৭ হাজার ৬০০ টাকা!
লন্ডন সফরে যাচ্ছেন আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মেহমুদ হোসেন, পরিচালক মো. এবতাদুল ইসলাম, সাজ্জাদ জহির, কাজী মো. মাহবুব কাশেম, মো. গোলাম মোস্তফা ও মো. মনজুরুল হক। তাদের মধ্যে প্রথম চারজন শেয়ারহোল্ডার নন, আর বাকি দুজন সরকার মনোনীত প্রতিনিধি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইএফআইসি ব্যাংকের মুখপাত্র মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “লন্ডন সফর না করার বিষয়ে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। তবে ইউকে সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন সংক্রান্ত একটি প্রশিক্ষণে বোর্ডকে উপস্থিত থাকতে হবে।”
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, বর্তমানে ব্যাংকের এমডি ও চেয়ারম্যানদের বিদেশ সফরের আগাম অনুমোদন প্রয়োজন নেই। তবে সফর শেষে খরচের হিসাব দিতে হবে এবং অনিয়ম পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক আইএফআইসি ব্যাংকের পুরনো বোর্ড বাতিল করে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে। এর ফলে সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের প্রভাব কমে যায়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
নতুন বোর্ডেও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠছে, কারণ শেয়ারহোল্ডার না হয়েও বেশ কয়েকজন পরিচালক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং ব্যাংকের অর্থ ব্যয়ে জবাবদিহির অভাব দেখা যাচ্ছে।