স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আসছে নতুন মাত্রা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উদ্ভূত ছাত্র ও নাগরিক আন্দোলনের নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে একটি নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে, বিশেষ করে ২৩ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যা দিবস হওয়ায় একদিন আগেই, অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারি নতুন দলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
নতুন রাজনৈতিক দলটি শুরুতে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে যাত্রা শুরু করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক হিসেবে চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সদস্য সচিব পদে এখনও আলোচনা চলছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তাদের মধ্য থেকে একজন চূড়ান্ত হবেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল এবং মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকবেন। সূত্র জানিয়েছে, কিছু তরুণ রাজনীতিক ও ছাত্রনেতাও এই দলে যুক্ত হতে পারেন।
নতুন রাজনৈতিক দলের নাম এবং প্রতীক নির্ধারণের জন্য জনমত জরিপ চলছে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, অনলাইন ও অফলাইনে ব্যাপক জনমত সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনলাইনে প্রায় দেড় লাখ মানুষ মতামত দিয়েছেন। অধিকাংশ মানুষ দলটির নামের সঙ্গে “নাগরিক”, “বৈষম্যবিরোধী” ও “অধিকার” শব্দগুলো যুক্ত করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
প্রতীক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও প্রচলিত প্রতীকের বাইরে অভ্যুত্থানের চেতনার প্রতিফলন ঘটাতে চান উদ্যোক্তারা। নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সামান্তা শারমিন বলেন, “আমরা জনগণের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। পাশাপাশি, গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করছি যাতে একক নেতৃত্ব বা পরিবারতন্ত্রের সংস্কৃতি তৈরি না হয়।”
নতুন দলটি মূলত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আদর্শকে ধারণ করে এগোবে। দলটির সহ-মুখপাত্র সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, “আমরা নতুন রাষ্ট্রকল্প ও নীতি নিয়ে আসছি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, পরিবেশসহ নানা বিষয়ে জনগণের মতামত সংগ্রহ করছি। দেশ-বিদেশের নাগরিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই দলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। প্রবাসীরাও তাদের দাবি ও প্রস্তাবনা দিচ্ছেন, যা আমরা বিবেচনায় নিচ্ছি।”
নতুন রাজনৈতিক কাঠামো গঠনের জন্য গবেষণা চালানো হচ্ছে বিভিন্ন দেশের উদাহরণ নিয়ে। ভারতের আম-আদমি পার্টি, তুরস্কের একে পার্টি ও পাকিস্তানের পিটিআই-এর রাজনৈতিক কৌশল ও গঠনপ্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সামান্তা শারমিন বলেন, “আমরা এমন একটি দল গঠন করতে চাই, যা জনগণের কাছে নতুন হলেও গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখবে।”
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানিয়েছেন, নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে না। বরং তারা প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে। তবে এই সংগঠনের নেতারা চাইলে নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, “ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহেই আমরা নতুন দল ঘোষণার জন্য কাজ করছি। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া নেতারাই এই দলের নেতৃত্বে থাকবেন। এটি হবে বাংলাদেশপন্থি একটি রাজনৈতিক দল, যেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিতে পারবেন।”