টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: হেফাজতে ইসলাম ও কওমি ওলামা পরিষদের আপত্তির মুখে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় নির্ধারিত লালন স্মরণোৎসব বন্ধ হয়ে গেছে। আয়োজকরা অভিযোগ করেছেন, ধর্মীয় সংগঠনগুলোর বাধার কারণে তারা উৎসবটি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন।
মধুপুর লালন সংঘের আয়োজনে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় এই স্মরণোৎসব হওয়ার কথা ছিল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জুবায়ের হোসেনের।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সবুজ মিয়া জানান, হেফাজতে ইসলাম ও কওমি ওলামা পরিষদ শুরু থেকেই অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করছিল। তারা ইউএনওকে লালনের গান ও দর্শন নিয়ে সমালোচনামূলক লেখার স্ক্রিনশট দেখিয়ে এটিকে ‘শিরক’ বা ‘কুফরি’ বলে দাবি করে। পাশাপাশি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকেও তারা বিষয়টি জানায়।
সবুজ মিয়া বলেন, “হেফাজতে ইসলামের মধুপুর শাখার সভাপতি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, তারা এই অনুষ্ঠান হতে দেবেন না। ইউএনও স্যার আমাদের বিষয়টি জানান। পরবর্তীতে আমরা হেফাজতের সাথে আলোচনায় বসি, কিন্তু তারা তাদের অবস্থানে অনড় থাকেন। ফলে পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা উৎসবটি স্থগিত করি।”
মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমরানুল করিম জানান, লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন ছিল, তবে সেটি শেষ পর্যন্ত হয়নি। তিনি বলেন, “অনুষ্ঠানটি কেন হয়নি, তা আমরা জানি না। কেউ বাধা দিয়েছে, নাকি আয়োজকরাই বাতিল করেছেন, সে বিষয়ে পুলিশ অবগত নয়। আমাদের কাছে কোনো অভিযোগও আসেনি।”
অন্যদিকে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জুবায়ের হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
লালন স্মরণোৎসব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় সংস্কৃতিপ্রেমীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, মুক্তচিন্তা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর এ ধরনের বাধা সমাজের জন্য অশুভ সংকেত।
প্রসঙ্গত, লালন শাহ ছিলেন একজন বহুমাত্রিক দার্শনিক ও মরমী কবি, যিনি সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে মানবতাবাদী চিন্তাধারার প্রচার করেছিলেন। তার দর্শন ও গান বাংলার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।