সম্পত্তি ভাগাভাগিতে ভাইয়ের মানবিকতা নিয়ে প্রশংসিত অভিনেত্রী রুনা খান
সম্প্রতি জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে চিত্রনায়িকা পপি ও তাঁর পরিবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও, সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এটি অভিনেত্রী রুনা খানের পরিবারের সম্পত্তি বণ্টনের মানবিক গল্প। যেখানে কোনো দ্বন্দ্ব নয়, বরং ভাই-বোনের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক সম্মানের নিদর্শন দেখা গেছে।
অভিনেত্রী রুনা খান তাঁর ফেসবুক পোস্টে নিজেই ঘটনাটি শেয়ার করেছেন। পোস্টে তিনি তাঁর বাবার ২৫ কাঠা জমি বিক্রি করে সেখান থেকে পাওয়া টাকা কীভাবে তাঁর ভাই তুহিন তাঁর সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন, সেই মানবিক গল্প তুলে ধরেছেন।
রুনা খানের পোস্ট থেকে জানা যায়, তাঁর বাবার ২৫ কাঠার একটি জমি ছিল। সেই জমি বিক্রির পর ভাই তুহিন সম্পত্তির টাকা ভাগ করার সময় ন্যায্যতা এবং ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। রুনা লিখেছেন, “তুহিন আমার থেকে দেড় বছরের ছোট। পড়াশোনায় আমার থেকে কিছুটা পেছনে ছিল। কিন্তু তাঁর সততা এবং মানবিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।”
রুনার মতে, তিনি সংসারের হাল ধরার জন্য টিউশনি করে পড়াশোনা চালিয়েছেন এবং পরিবারের দায়িত্ব সামলেছেন। ভাই তুহিন কখনো এই অবদান ভুলে যাননি। জমি বিক্রির সময় তিনি সবার পরামর্শ অমান্য করে রুনার প্রাপ্য সম্পত্তির অর্ধেক তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তুহিনের যুক্তি ছিল, “রুনার আমার চেয়ে দশ গুণ বেশি আয় থাকলেও, এই সম্পত্তি মূলত রুনার অবদানের কারণেই রক্ষা পেয়েছে। তাই তার ন্যায্য অংশ দেওয়া আমার কর্তব্য।”
অভিনেত্রী রুনা খান তাঁর ফেসবুক পোস্টে আরও জানান, তাঁদের বাবার রিটায়ারমেন্টের পর কোনো আত্মীয়স্বজন আর্থিকভাবে সাহায্য করেননি। রুনা কখনো কারো কাছে টাকা ধার বা সাহায্য চাননি। ১৮ বছর বয়স থেকে টিউশনি করে নিজে চলেছেন এবং পরিবারের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই কারণেই তাঁদের বাবার জমি বিক্রি করতে হয়নি এবং সম্পত্তি আজও টিকে আছে।
তুহিন যখন সম্পত্তি বণ্টনের সময় সবার পরামর্শ অনুযায়ী সম্পূর্ণ অংশ নিজের কাছে রাখার সুযোগ পেয়েছিলেন, তখন তিনি উল্টো উদারতার পরিচয় দেন। রুনা তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন, “তুহিন বলেছিল, যদি রুনার আমার চেয়ে ১০ গুণ বেশি না থাকত, তাহলে পুরো জমির মালিকানাই ওকে দিয়ে দিতাম। কারণ এই সম্পত্তি মূলত ওর পরিশ্রমেই রক্ষা পেয়েছে।”
রুনার এই পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনেকেই বলেছেন, বর্তমান সমাজে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের ঘটনা খুবই সাধারণ। এমন পরিস্থিতিতে তুহিনের এই মানবিক এবং ন্যায্য পদক্ষেপ সমাজের জন্য এক অনুকরণীয় উদাহরণ।
রুনা খান তাঁর স্ট্যাটাসের শেষে বলেন, “আমার ভাই যা করেছে, তা এই দেশের অনেক ভাইয়ের জন্য শিক্ষণীয়। অর্থ-বিত্ত কিংবা খ্যাতি না থাকলেও আমার ভাই সত্যিকারের মানুষ।” তাঁর এই বক্তব্য অনেকের হৃদয় স্পর্শ করেছে।
সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে দ্বন্দ্ব অনেক পারিবারিক সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়। তবে রুনা খান এবং তাঁর ভাই তুহিন প্রমাণ করেছেন, ভালোবাসা এবং পারস্পরিক সম্মান থাকলে সম্পত্তির মতো বিষয় কখনোই সম্পর্কের মধ্যে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। তাঁদের এই উদাহরণ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পারিবারিক সম্পত্তির চেয়ে সম্পর্কই বড়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই মন্তব্য করেছেন, তুহিনের মতো ভাই এই সমাজে খুব কমই দেখা যায়। একজন মন্তব্যকারী লিখেছেন, “এই ধরনের উদাহরণ আমাদের সমাজে আরও প্রয়োজন। তুহিন যেমন তাঁর বোনের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছেন, তেমনিভাবে অন্য ভাইয়েদেরও উচিত বোনদের প্রতি ন্যায্য এবং মানবিক আচরণ করা।”
সম্পত্তি বণ্টনে সঠিকতা এবং সততা পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষার অন্যতম প্রধান উপায়। অনেক পরিবারে সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের ফলে সম্পর্ক চিরতরে ভেঙে যায়। কিন্তু রুনা খান এবং তাঁর ভাই তুহিন দেখিয়েছেন, কীভাবে সম্পত্তি বণ্টন সঠিকভাবে করা যায় এবং সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।
তাঁদের এই ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি সমাজের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা। সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ না করে যদি সবাই ন্যায্যতা এবং ভালোবাসার জায়গা থেকে এগিয়ে আসে, তাহলে পারিবারিক শান্তি এবং সৌহার্দ্য বজায় রাখা সম্ভব।
রুনা খানের গল্প নারীদের ভূমিকার গুরুত্বকেও সামনে নিয়ে আসে। তিনি পরিবারের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা অনেক নারীর জীবনের সঙ্গে মিলে যায়। অনেক মেয়ে তাঁদের পরিবারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্পত্তি বণ্টনে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। রুনার ভাই তুহিন যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তা আমাদের সমাজে নারীদের প্রতি আরও সম্মান প্রদর্শনের একটি উদাহরণ হতে পারে।
রুনা খান এবং তাঁর ভাই তুহিনের এই ঘটনা আমাদের সমাজে একটি ইতিবাচক বার্তা দেয়। এটি প্রমাণ করে যে, সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের চেয়ে পারস্পরিক ভালোবাসা এবং সম্মান অনেক বেশি মূল্যবান। তুহিনের মতো ভাই যদি সমাজে আরও বেশি থাকে, তাহলে আমাদের সমাজ আরও মানবিক এবং সম্পর্কময় হয়ে উঠবে।
রুনা খান যেভাবে তাঁর জীবনের এই বিশেষ মুহূর্তটি সবার সঙ্গে ভাগ করেছেন, তা কেবল প্রশংসার দাবিদার নয়, বরং এটি আমাদের সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।