বিচারের দাবিতে নগরজুড়ে পোস্টার, আতঙ্কে পরিবার
কুমিল্লায় বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামকে হত্যা করার ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। নিহতের পরিবার, স্বজন এবং স্থানীয় জনগণ হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
গত ৩০ জানুয়ারি মধ্যরাতে, কুমিল্লার পাঁচথুবি ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামে তৌহিদুল ইসলামের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। তারা তৌহিদুল ইসলাম ও প্রতিবেশী লুৎফুর রহমানকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। পরদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হামলাকারীরা আবারও তাদের বাড়িতে আসে এবং ঘরে তল্লাশি চালায়। পরে লুৎফুর রহমানকে ছেড়ে দিলেও তৌহিদুলকে নিয়ে তারা অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়।
একপর্যায়ে গোমতী বাঁধের ঝাঁকুনিপাড়ায় তৌহিদুল ইসলামকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত তৌহিদুল ইসলামের পরিবার জানিয়েছে, তার সাথে আসামিদের দীর্ঘদিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার সালিশ হয়েছে। হত্যার আগেও তৌহিদুলকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
ঘটনার পর ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে, নিহতের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন:
- সাইফুল ইসলাম (পাঁচথুবি ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা)
- তানজিল উদ্দিন (নিহতের প্রতিবেশী, ইটাল্লা গ্রামের বাসিন্দা)
- নাজমুল হাসান টিটু
- খাইরুল হাসান মাহফুজ
- সাইদুল হাসান সবুজ
- সোহেল (বামইল গ্রামের বাসিন্দা)
এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
নিহতের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ জানান,
“আমরা মামলা করেছি ৭ দিন হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
এদিকে, কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন,
“মামলার আগেই আসামিরা আত্মগোপনে চলে গেছে, তাই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
হত্যার পর থেকে তৌহিদুল ইসলামের বিচারের দাবিতে কুমিল্লা নগরজুড়ে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। এসব পোস্টারে তানজিল, সাইফুল, খাইরুল ও নাজমুলের ছবি প্রকাশ করে তাদের ফাঁসির দাবি জানানো হয়েছে।
তৌহিদের মৃত্যুতে স্থানীয় যুবদল, বিএনপি এবং এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেছে। তারা অবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, আসামিদের পরিবারের দাবি, এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক। নাজমুল, খাইরুল ও সাইদুলের বাবা মোক্তল হোসেন বলেন,
“আমার তিন ছেলে তৌহিদুলের পরিচিত ছিল। তারা কোনোভাবেই তাকে হত্যা বা নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত নয়। এই মামলা মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”
তৌহিদুল ইসলাম ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন এবং রাজনীতির পাশাপাশি চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি শিপিং কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গত ২৬ জানুয়ারি তার বাবা মারা যাওয়ায় তিনি বাড়িতে আসেন। তার হত্যার দিন ছিল বাবার কুলখানি।
এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দুষ্কৃতকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
- দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
- তদন্তের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
- নিহতের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
- সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানো যায়।
তৌহিদুল ইসলামের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে জনমনে ক্ষোভ বাড়বে এবং আইনের প্রতি অনাস্থা তৈরি হতে পারে। সরকারের উচিত সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত গ্রেপ্তার নিশ্চিত করা।