বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের রোয়াংছড়ির দেবতাকুম পর্যটন কেন্দ্র দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুলে দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় আগামীকাল (১১ ফেব্রুয়ারি) থেকে পর্যটকরা সেখানে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।
রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সশস্ত্র সংগঠনগুলোর তৎপরতা বাড়তে থাকে। এর জেরে ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর রুমা ও রোয়াংছড়িতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। পরবর্তী সময়ে নিষেধাজ্ঞার আওতা বাড়িয়ে থানচি ও আলীকদমেও তা বহাল রাখা হয়।
এর মধ্যে আলীকদমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতে তা বহাল থাকে। ২০২৩ সালের ৩ ও ৪ এপ্রিল রুমা ও থানচির তিনটি ব্যাংকে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ (কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) ডাকাতি চালায়, যার ফলে ৬ এপ্রিল থেকে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযানের মধ্যেই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন।
দীর্ঘ অভিযানের পর প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ফলে পর্যটন খাতে আবার প্রাণ ফেরানোর উদ্যোগ হিসেবে রোয়াংছড়ির অন্যতম আকর্ষণ দেবতাকুমকে উন্মুক্ত করা হলো।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে দীর্ঘদিনের পর্যটক শূন্যতা কাটিয়ে তারা নতুন করে ব্যবসার সুযোগ পাবেন। এছাড়া পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেলে স্থানীয় হোটেল, রেস্তোরাঁ ও পরিবহন খাতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান দেবতাকুম। এটি মূলত এক প্রাকৃতিক জলাধার, যা ঘন সবুজে ঘেরা এবং চারপাশে সুউচ্চ পাহাড়ে আবৃত। পর্যটকদের জন্য অ্যাডভেঞ্চারের অন্যতম আকর্ষণ এটি, কারণ এখানে ট্রেকিং ও নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা নেওয়া যায়।
দেবতাকুম ভ্রমণে ইচ্ছুক পর্যটকদের যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। প্রশাসন থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, দলবদ্ধ হয়ে ভ্রমণ করা, স্থানীয় গাইড নেওয়া এবং প্রশাসনের দেওয়া নির্দেশনা মেনে চলা।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে দেবতাকুমের সৌন্দর্য আবারও উপভোগ করতে পারবেন ভ্রমণপিপাসুরা। এর ফলে একদিকে যেমন পর্যটন শিল্পে গতি আসবে, তেমনি স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।