ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি: দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি জানান, অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। গত পাঁচ মাসে রপ্তানি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি আমদানি বেড়েছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনছে।
গতকাল রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান তিনি। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে “বাংলাদেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ করণীয়” শীর্ষক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন এবং বিগত ছয় মাসের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন।
প্রেস সচিব জানান, মুদ্রাস্ফীতি ১২ শতাংশ থেকে কমে বর্তমানে ৯ শতাংশে নেমেছে। সরকার আশা করছে, আগামী জুলাইয়ের মধ্যে এটি সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে আসবে। নতুন বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, যা অর্থনীতির পুনরুদ্ধারকে ত্বরান্বিত করবে।
সরকারি প্রতিবেদনের বরাতে তিনি জানান, খাদ্যশস্যের দামও কমার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে কৃষিপণ্যের দাম হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে দেশের বাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য সরকার সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টার চালু করেছে। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে এবং পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র্যাব, কোস্ট গার্ড ও আর্মড ফোর্সেস ব্যাটালিয়নের সদস্যরা এতে যুক্ত থাকবেন।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় গঠিত এই কেন্দ্র গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে। রাজধানীসহ দেশের যেকোনো স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশে কোরিয়ান ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) নির্মাণের জমিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, সংশ্লিষ্টদের হাতে জমির কাগজপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে, যার ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগ বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারে।
তিনি বলেন, “পূর্ববর্তী সরকার কোরিয়ান ইপিজেডের জমি দখলের অপচেষ্টা করায় বিনিয়োগকারীরা ভিয়েতনামে চলে গিয়েছিলেন। তবে বর্তমান সরকার সংকট সমাধান করায় বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে এবং বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতির ঘোষণা দিয়েছেন। ব্যাংক খাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, “ব্যাংক ডাকাতদের কোনোভাবেই রেহাই দেওয়া যাবে না। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, ব্যাংক খাত থেকে লুটপাট হওয়া অর্থ ফেরাতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এস আলম গ্রুপের সব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে, পাশাপাশি নগদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।
গভর্নর আরও জানান, ১২ জন অর্থ পাচারকারীর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কীভাবে তারা অর্থ পাচার করেছে, তা তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।