ঢাকা, ১৬ আগস্ট ২০২৪: বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ছাত্র আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীরা এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। পরিবর্তে, তারা দেশে গঠনমূলক সংস্কার আনতে এবং নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ছাত্র আন্দোলনের চার শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে যে কঠোর দমন-পীড়ন চলেছে, তার পুনরাবৃত্তি তারা আর দেখতে চান না। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে গত জুন পর্যন্ত দেশজুড়ে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নামা শিক্ষার্থীরা পরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরিত হন। এর ফলে, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তী সরকার, যার নেতৃত্বে আছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়ক রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দেশের সামগ্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করছেন শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহফুজ আলম রয়টার্সকে জানান, “দুই রাজনৈতিক দলের ওপর মানুষ আসলেই ক্লান্ত–বিরক্ত। আমাদের ওপর তাদের আস্থা রয়েছে।” আইন নিয়ে পড়াশোনা করা ২৬ বছর বয়সী মাহফুজ আলম বলেন, “এক মাসের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এর আগে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করতে চান শিক্ষার্থীরা।”
তাহমিদ চৌধুরী, যিনি এই আন্দোলনের আরেকজন সমন্বয়ক, জানান, তাদের নতুন রাজনৈতিক দলের ভিত্তি হবে অসাম্প্রদায়িকতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। তবে, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ছাত্র প্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করেননি। তারা শুধু নির্বাচন কমিশনে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন।
নাহিদ ইসলাম, যিনি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, বলেন, “এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল নতুন বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে কোনো ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচার থাকবে না। তা নিশ্চিত করতে গঠনগত সংস্কার দরকার, এবং এতে কিছু সময় লাগবেই।”
এদিকে, ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন কিনা জানতে চাইলে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়নি। তবে, রাজনৈতিক ধারা পরিবর্তন হবে, কারণ এতদিন এই রাজনীতি থেকে তরুণদের বাদ রাখা হতো।”
আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি থেকে দ্রুত নির্বাচনের যে দাবি জানানো হয়েছে, তা অন্তর্বর্তী সরকার আমলে নিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম।