ডাকাতদের বন্দুক হামলায় গুরুতর আহত জেলে, ৫ লাখ টাকার মালামাল লুট
পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলার এফবি মা-তে জলদস্যুদের হামলায় তিন জেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে পায়রা বন্দর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
আহত তিন জেলে হলেন— জালাল শরীফ (৫৫), মো. শাহআলম (৪৫) এবং মিজানুর রহমান (২৫)। তাদের সবার বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার বিভিন্ন গ্রামে।
শুক্রবার দুপুরে আহতদের উদ্ধার করে কলাপাড়া ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জালাল শরীফের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানান এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। জালাল শরীফের ডান চোখে গুলি লেগেছে। অন্যদিকে, মো. শাহআলম এবং মিজানুর রহমানের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তারা কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এফবি মা ট্রলারের মাঝি সরোয়ার হোসেন জানান, ১৩ জন জেলে নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যান তারা। শুক্রবার রাতে তীরে ফেরার পথে একদল জলদস্যু তাদের ট্রলারে বন্দুক দিয়ে গুলি চালায়। এতে তিনজন জেলে গুলিবিদ্ধ হন।
ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে বাকি জেলেদের জিম্মি করে ট্রলারে থাকা প্রায় ৩ লাখ টাকা মূল্যের ইলিশ মাছ, ১২টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, জ্বালানি তেলসহ আনুষঙ্গিক প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
মাঝি সরোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা প্রাণ ভিক্ষা চাই এবং ট্রলারটি না নেওয়ার অনুরোধ জানাই। দস্যুরা মালামাল নিয়ে চলে যায়। তবে চলে যাওয়ার সময় তারা আমাদের হুমকি দিয়ে বলে—এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে প্রাণে মেরে ফেলবে।”
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ট্রলারটি মহিপুর মৎস্য বন্দরে ফিরে আসে। জেলেরা ট্রলার মালিককে পুরো ঘটনা জানালে মৎস্য বন্দরজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।
মহিপুর মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমন দাস বলেন, “এফবি মা ট্রলারে জলদস্যুদের ডাকাতির ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।”
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “এ ঘটনায় এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের হামলা নতুন কোনো ঘটনা নয়। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা প্রায়ই ডাকাতির শিকার হন। সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের ঘটনা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জেলেদের জীবনের জন্য বড় হুমকি।
স্থানীয় জেলেরা জানান, “আমরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গভীর সমুদ্রে যাই। জলদস্যুদের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।”
জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং জলদস্যুদের দমন করতে স্থানীয় প্রশাসন ও কোস্ট গার্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
মহিপুরের স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, “বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হলে নিয়মিত টহল জোরদার করতে হবে। আমাদের জেলেদের জীবনের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”