যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্ট’ শুরু
গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা গাজীপুরের পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। পুলিশ জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলে এসে অজ্ঞাত এক দুর্বৃত্ত তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
এই ঘটনার পর গাজীপুরসহ সারাদেশে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনে এ অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান নিশ্চিত করেছেন যে, গুলিবিদ্ধ সমন্বয়ক মোবাশ্বের হোসেনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, দুর্বৃত্ত একজন মোটরসাইকেলে এসে মোবাশ্বের হোসেনকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এরপর দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গাজীপুরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে, গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা চালায় একদল ছাত্র ও জনতা। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি হামলাকারীদের আটক করে এবং মারধর করেন। এই ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন।
আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দাবি করেছে যে, ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারীরা ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সমর্থক। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শনিবার গাজীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশও করেছে তারা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “আমরা বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য সংগ্রাম করছি। যারা আমাদের দমন করতে চায়, তারা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করলে আমরা আরও বড় আন্দোলনের ডাক দেব।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডেভিল হান্ট’।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে গাজীপুরের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যৌথ বাহিনীর এই বিশেষ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, “শনিবার থেকেই গাজীপুরে অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযান চলাকালে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং প্রয়োজনে আরও কড়াকড়ি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো, গাজীপুরসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। যৌথ বাহিনীর এ অভিযানে র্যাব, পুলিশ, ডিবি এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একযোগে কাজ করছে।
এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা জানান, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা এবং গাজীপুরের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা। এ অভিযান যতদিন প্রয়োজন, ততদিন চলবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা এই বিশেষ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তারা চান, অভিযানের নামে যেন কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হয়।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, “গাজীপুরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ। যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়ক হবে বলে আমরা আশা করি।”
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, “আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পক্ষে। তবে আমাদের ওপর হামলাকারীদের যদি দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।”
গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্ট’ নিয়ে সারা দেশে চলছে আলোচনা। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা নিয়ে সাধারণ মানুষসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সতর্ক দৃষ্টিতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, অভিযান যতদিন প্রয়োজন, ততদিন চলবে। এই অভিযানের মাধ্যমে গাজীপুরে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।