ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি:
দেশত্যাগ অথবা কারাবাস— আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া এমন শর্তের মুখে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আপস না করে কারাবাসকেই বেছে নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা। তাদের ভাষ্য, খালেদা জিয়া যদি দেশ ছাড়তেন, তবে কারাগারে যেতে হতো না। কিন্তু তিনি আপসহীন থেকে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মতে, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর কারাগারে যান খালেদা জিয়া। উচ্চ আদালতে সেই সাজা বেড়ে ১০ বছরে উন্নীত হয়। দলটির নেতারা অভিযোগ করেন, এটি ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং শেখ হাসিনার সরকারের পরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ।
এক-এগারোর সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাগুলো আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গতি পায়। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালের ভাষ্য, “বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এবং খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে একটি সাজানো রায় দেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, “খালেদা জিয়া আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন বলেই রায় ঘোষণার দিন নিজেই আদালতে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু বিনা অপরাধে তাকে কারাবরণ করতে হয়।”
বিএনপি নেতারা জানান, কারাবন্দি থাকা অবস্থায় অসুস্থ খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার প্রস্তাব সরকারের কাছে দেওয়া হলেও শর্ত ছিল— তাকে দেশত্যাগ করতে হবে। কিন্তু এই শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “খালেদা জিয়া সবসময় আপসহীন ছিলেন। ২০১৮ সালে কারাবরণ তার সেই ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ। তাকে বারবার বলা হয়েছিল, রাজনীতি ছাড়লে কিংবা দেশত্যাগ করলে সাজা মওকুফ করা হবে, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।”
স্থায়ী কমিটির আরেক নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ মন্তব্য করেন, “খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করা আসলে গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বকে বন্দি করার শামিল। তাকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করার ষড়যন্ত্র ছিল এটি।”
কোভিড-১৯ মহামারির সময় ২০২১ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে গুলশানের বাসায় থাকার অনুমতি দেয়। এরপর থেকেই তিনি বাসা ও হাসপাতালের মধ্যে সীমাবদ্ধ জীবনযাপন করেন।
অবশেষে ২০২৩ সালের আগস্টে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে খালেদা জিয়ার মুক্তির ঘোষণা দেন। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে তার সাজা বাতিল হয় এবং পরে আপিল বিভাগ তাকে সম্পূর্ণ খালাস দেন।
বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া কখনোই কোনো রাজনৈতিক চাপে মাথা নত করেননি। ৯০-এর দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের কারাবরণ— প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি আপসহীন নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছেন।