৫ আগস্টেই ধূলিসাৎ করা উচিত ছিল: ফেসবুক লাইভে হাসনাত আবদুল্লাহ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সম্প্রতি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়ি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে তিনি বলেন, “পৃথিবীতে ফ্যাসিবাদ নির্মূলের পর তার প্রতীকগুলো রেখে দেওয়া হয়নি। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি ৫ আগস্টই ধূলিসাৎ করা উচিত ছিল।”
তাঁর এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ঐতিহাসিক এ বাড়ি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ স্মারক। তবে ছাত্রনেতার মতে, এটি আওয়ামী লীগের “তীর্থস্থান” হিসেবে পরিচিত এবং ফ্যাসিবাদের প্রতীক হিসেবে সেটিকে ভেঙে ফেলা সময়ের দাবি ছিল।
ফেসবুক লাইভে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “পৃথিবীর কোথাও ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করার পর তার প্রতীকগুলোকে সংরক্ষণ করা হয়নি। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটিকে ঘৃণাস্তম্ভে পরিণত করা উচিত ছিল।” তিনি আরও দাবি করেন, সাধারণ মানুষ পরবর্তীতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেটি করে ফেলেছে।
এ সময় তিনি বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো নির্যাতকের জন্য জায়গা নেই। আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। এরপর রিকনসিলিয়েশনের (পুনর্মিলন) মাধ্যমে তাদের সমাজে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি আলোচনা হতে পারে।”
৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর এবং আগুন দেয়। ঘটনার পর বাড়িটির বেশ কিছু অংশ ধসে পড়ে। হাসনাতের মতে, এই ঘটনা পুরোপুরি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল এবং জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষকে “নাগরিক নয়, প্রজা বানিয়ে রেখেছিল” উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, “আওয়ামী লীগ এখন অপ্রাসঙ্গিক। তারা প্রাসঙ্গিক থাকলে ৫ আগস্টের ঘটনা ঘটতো না।”
তাঁর মতে, আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর মধ্যে অপরাধবোধ নেই। এত মানুষ হত্যার পরও তারা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে প্রহসনের নির্বাচন এবং ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। “আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই,” দাবি করেন তিনি।
হাসনাত আবদুল্লাহ তার বক্তব্যে আমলা এবং পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, “আওয়ামী লীগ আপনাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু রাষ্ট্র জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। জনগণের শক্তিকে বুঝুন এবং জনগণের পাশে থাকুন। আমি মন থেকে চাই, সচিবালয়ের পরিণতি যেন ধানমন্ডি ৩২-এর মতো না হয়।”
ক্ষমতা দখল এবং রাজনৈতিক পুনর্বাসন নিয়ে কঠোর অবস্থান
ছাত্রনেতা হাসনাত আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের আদর্শকে ধারণ করে ভবিষ্যতে কেউ রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে পারবে না। তারা অপরাধ স্বীকার না করলে তাদের কোনো জায়গা হবে না। বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।”
এই বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল প্রতিক্রিয়া হয়েছে। অনেকে এই মন্তব্যকে প্রতারণামূলক ও উসকানিমূলক বলে আখ্যা দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, দেশের জনগণের একটি বড় অংশের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে, যা এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক অস্থিরতাকে আরও উসকে দিতে পারে। ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণ এবং ঐতিহ্য রক্ষা করা একটি জাতির দায়িত্ব। এ ধরনের মন্তব্য জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের শামিল বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও অভিযোগ করেন, “আওয়ামী লীগ গত দেড় দশকে ২৬০ বিলিয়ন টাকার বেশি অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। এই অর্থ ব্যবহার করে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।” তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে নির্যাতন চালিয়ে গেছে এবং এখন ক্ষমতা হারানোর পরও বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
এই বিতর্কিত বক্তব্যের বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে রাজনৈতিক মহলে এটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।