প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে উত্তপ্ত পরিস্থিতি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা রাজধানীর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশের লাঠিচার্জ এবং জলকামান ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে এক নারীকে পুলিশ সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
এর আগে, সকাল থেকেই নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা বাসভবনের সামনে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করে।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করছেন, হাইকোর্টের রায়ে তাদের জীবনের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। তারা সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে এ পদের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এখন হাইকোর্টের রায় তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলেছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন বলেন, “আমরা কঠোর পরিশ্রমের পর এই নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। হাইকোর্টের রায়ে আমাদের চাকরি বাতিল হওয়ায় আমরা অসহায় অবস্থায় পড়েছি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চাই।”
আরেকজন বিক্ষোভকারী বলেন, “আমরা কোনো অন্যায় করিনি। আমাদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এই রায় পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।”
গতকাল হাইকোর্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ছয় হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম বাতিলের রায় দেন।
এই রায় আসে কোটা অনুসরণে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে। নিয়োগবঞ্চিত ৩০ জন প্রার্থী এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করেন।
২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলাফলে কোটা অনুসরণের সঠিক পদ্ধতি না মানার অভিযোগে নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ১৯ নভেম্বর রুল জারি করে নিয়োগ কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন।
রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল আদালত এ নিয়োগ বাতিলের রায় দেন। আদালতের রায়ে বলা হয়, এই নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। ফলে এ নিয়োগ বাতিল করা হলো।
বিক্ষোভের পর ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
আহত বিক্ষোভকারীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান জানানো প্রয়োজন। তবে ভুক্তভোগীরা যদি মনে করেন যে এই রায় অন্যায় হয়েছে, তবে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংকট দ্রুত সমাধানের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (DPE) জানিয়েছে, তারা হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবে। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আসার আগ পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।