ঢাকা, ৬ ফেব্রুয়ারি: ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার অবসান নিছক ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সম্ভব নয়, বরং তার বিকল্প গঠনের লড়াইও সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি লেখেন, “আমরা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়ছি। শুধু কিছু মূর্তি বা স্থাপনা ভাঙার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আমাদের উচিত পাল্টা শক্তি, চিন্তা ও হেজেমনি গড়ে তোলা। একটানা ভাঙার প্রকল্প থেকে বেরিয়ে এসে গড়ার দিকে মনোযোগী হওয়া দরকার।”
মাহফুজ আলম তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন, লীগ বা শেখ হাসিনা কোনো বিচ্ছিন্ন সত্তা নয়, বরং এটি আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের একটি অংশ। এই আধিপত্যবাদ তার শক্তি প্রতিষ্ঠা করেছে সুসংগঠিত রাষ্ট্রকল্প, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে। তিনি বলেন, “আমাদের পাল্টা হেজেমনিও এই তিনটি স্তম্ভের ওপর নির্ভরশীল। ভাঙার পরে গড়ার সুযোগ এসেছে, কিন্তু অনন্তকাল শুধু ভাঙার প্রকল্পে লিপ্ত থাকলে ভালো ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে না।”
তিনি আরও বলেন, গড়ার প্রকল্পগুলো শিগগিরই শুরু হবে এবং বাস্তবায়িত হবে। তাই সবাইকে গঠনের প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। আহত ও নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন এবং জুলাই গণহত্যার বিচারের কাজও অগ্রসর হচ্ছে। এ মাসেই এসব কার্যক্রম আরও গতি পাবে।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের রাগ, ক্ষোভ ও ঘৃণাকে ইতিবাচক শক্তিতে রূপান্তর করা দরকার। এখনো সেই সুযোগ হারিয়ে যায়নি। সামনের অন্তত এক দশক আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যখন গণতন্ত্র ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের মাধ্যমে নতুন ভবিষ্যৎ গঠন করা সম্ভব হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের উচিত শুধু প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে দূরদর্শী পরিকল্পনা গ্রহণ করা। কারণ, এই লড়াই মাত্র শুরু হয়েছে। অন্তত এক দশক পরে এর একটি সমাধান হয়তো পাওয়া যাবে। অথচ আমরা এখনো যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করিনি।”
ভবিষ্যতের লড়াইয়ের জন্য সৃজনশীল শক্তি ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, “ঐতিহাসিকভাবে আমাদের সামনে বিরল একটি সুযোগ এসেছে। এবার জিততে হবে, আর জেতার একমাত্র পথ হলো— সুসংগঠিত রাষ্ট্রকল্প, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং মর্যাদাবান দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা।”
তিনি তার পোস্টের শেষে বলেন, “আল্লাহ আমাদের দূরদৃষ্টি দিন, যেন আমরা সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারি।”